মে ৭, ২০২০,৪:২৩ অপরাহ্ণ
বিডি নিউজ টিভি ২৪ ডট কম : মোঃ শহিদুল ইসলাম:চট্টগ্রাম: এবার কর্মরত অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন বিভাগের এক কর্মী। বন্দর ওয়ান স্টপ সার্ভিসের কর্মীর নাম আবদুল হালিম (৫৪), তার বাড়ী ঝালকাঠি জেলায়। সোমবার রাতে করোনাভাইরাস লক্ষন নিয়ে তিনি মারা গেলেও নমুনা পরীক্ষার পর বুধবার রাতেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এই প্রথম বন্দরের এক কর্মী মারা গেলেন। করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার সকালে ওই বিভাগের কর্মীরা সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে কাজ বন্ধ করে দেন। পরে বন্দর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আলোচনা, আশ্বাসের পর দুপুর দেড়টা থেকে কর্মীরা সবাই কাজে যোগ দেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ হচ্ছে এই ট্রাফিক বিভাগ। বন্দরে জাহাজ ভিড়ানো, পণ্য উঠানামা, বন্দর থেকে ছাড় দেয়ার কাজটি করে থাকে সবচে গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার একাধিক সহকর্মী বলেন, বন্দর পরিবহন বিভাগের অধীন ওয়ান স্টপ সার্ভিসের বিল ক্লার্ক আবদুল হালিম রবিবার নিজ বিভাগে কর্মরত অবস্থায় শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। তিনি আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগী ছিলেন। রবিবার রাতে প্রথমে বন্দর হাসপাতালে গিয়ে তিনি শ্বাসকষ্টের জন্য নেবুলাইজার নিয়ে একটু স্বস্তি অনুভব করলে রাতেই বাসায় চলে যান। শরীরের উন্নতি না হওয়ায় সোমবার তিনি কাজে যোগ দিতে পারেননি। সোমবার রাতে আবারও শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে প্রথমে তিনি বন্দর হাসপাতালে যান; সেখানে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে স্বজনরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে যান। সেখানে পৌঁছার পর সোমবার রাত ১১টায় তিনি মারা যান। তার লক্ষন দেখে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এরপর তাকে সোমবার রাতেই নগরীর গরীব উল্লাহ শাহ মাজারে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, আবদুল হালিমের বাড়ী ঝালকাঠি। তিনি চট্টগ্রাম হালিশহর আবাসিক এলাকার এই্চ ব্লকে থাকেন। তার স্ত্রীসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।
এদিকে, মৃত আবদুল হালিমের শরীর থেকে গত সোমবার রাতে নমুনা নেয়া হলেও দুদিন পর রিপোর্ট আসে বুধবার। সেখানে তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। বৃহস্পতিবার সবাই পরিবহন বিভাগের কাজে যোগ দিলে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিভাগের কর্মীর মধ্যে করোনা ধরা পড়ার পর থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত এবং ঝুঁকিভাতা দেয়ার দাবিতে কর্মবিরতি করেন বিভাগের কর্মীরা।
পরিবহন বিভাগের সহকারী ট্রাফিক ইনস্পেকটর ও চট্টগ্রাম বন্দর (সিবিএ) কর্মচারী পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসে ১০৫ কর্মী কাজ করেন। অনেকেই তার সংষ্পর্শে এসেছেন, সুতরাং তাদের সবার নমুনা দ্রুত পরীক্ষা করতে হবে। এবং যাদের পজিটিভ পাওয়া যাবে তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা নিশ্চিত করতে হবে। আর তিনি নিয়মিতই নামাজ পড়তেন সেখানে, তাদেরকেও নমুনা পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে; যাতে সংক্রমন ছড়িয়ে না পড়ে।’
তিনি বলেন, ওই বিভাগের সব কর্মীকেই পিপিইসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে কাজ করা এবং ঝুঁকিভাতা নিশ্চিত করতে হবে। বন্দরের পরিবহন বিভাগ যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই কোনভাবেই বন্দরের কাজে ব্যাঘাত করা যাবে না।’
বৃহষ্পতিবার সকালে বিক্ষোভের পর বন্দর কর্তৃপক্ষের দুই সদস্য পরিবহন বিভাগের কর্মীদের সাথে বসে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করেন। এরপর দুপুর দেড়টা থেকে তারা কাজে যোগ দিলে বন্দরে পণ্য উঠানামা পুরোদমে সচল হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা তাদের সাথে বসে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি এবং বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছি। মারা যাওয়া কর্মীর পাশে কর্মরতদের সবাইকে ছুটি দিয়ে হোম কোয়ারেন্টিন থাকতে বলা হয়েছে। তাদের নমুনা সংগ্রহ করছি; রিপোর্টে নিশ্চিত হওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, বন্দরের সবচে গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন বিভাগের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রবেশ পথে জীবানুনাশক গেইট বা টানেল বসানো হচ্ছে। মাস্ক, গ্লাভস, সেনিটাইজার নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে পিপিই পরে তারা কাজ করতে পারবে না। এছাড়া ওয়ান স্টপ বিভাগে কাজকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। শারিরীক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সেবা নিতে আসা লোকজনের জন্য সারি করে দেয়া হয়েছে। এরকম আরও ১৬টি সারি করে দেয়া হবে।
Site Developed By: Md. Shohag Hossain