১৯১৪ ইং সাল থেকে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বে মা দিবস পালন করা হয়। এই বছর অর্থাৎ ২০২৪ইং সালে ১২ মে রোববার যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মা দিবস পালন করা হয় । এই দিন মায়ের ত্যাগ, অবদান, ভালোবাসার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার দিন। এই দিন হৃদয়ের সবটুকু অনুভূতি, আবেগ এবং শ্রদ্ধা উজাড় করে দিয়ে মাকে বিশেষ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। মা হলো এই পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র এবং মায়াবী সম্পর্ক। মা তার সন্তানকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, সমর্থন, আদর এবং যত্ন প্রদান করে লালন-পালন করে থাকেন। মা তার সন্তানের জন্য সবকিছু করতে পারেন, এমনকি নিজের জীবনও দিতে পারেন। মা তার সন্তানের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল, যেখানে সে সবসময় ভালোবাসা এবং সমর্থন পায়। মা তার সন্তানের জন্য সবসময় চিন্তিত থাকে ও তার সুখ এবং সমৃদ্ধির জন্য সবকিছু করে। মা তার সন্তানের জন্য একজন আদর্শ শিক্ষক, উত্তম বন্ধু, সামনে এগিয়ে চলার পরামর্শদাতা এবং সত্য ও ন্যায় কাজের সমর্থক। সর্বাবস্থায় মা তার সন্তানের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। গর্ভকালীন মায়ের অস্তিত্বের ওপর সন্তানের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। মায়ের রক্ত মাংসেই সন্তানের লালন-পালন। আবার সন্তানের অস্তিত্বের মধ্যেই মা তার বিকাশিত সত্তার নতুন রূপ দেখতে পায়। বিশ্বমন্ডলে মায়ের কোনো তুলনা নেই। সব ধর্মেই মায়ের গুরুত্ব সবার ঊর্ধ্বে বর্ণিত হয়েছে। মায়ের ঋণ অপরিশোধ্য অর্থাৎ এমন ঋণ যা কোনো দিন কেউ পরিশোধ করতে পারে না। মা শুধু সন্তানের মুখ থেকে মা ডাকের মধ্যেই আত্মার প্রশান্তি উপলব্ধি করে থাকেন।
মা দিবসের ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, এর উৎপত্তি নিয়ে বেশ কিছু মতভেদ রয়েছে। একটি মত অনুসারে, প্রাচীন গ্রিসে মাতৃদেবী সিবেলের উদ্দেশ্যে পালিত একটি উৎসব থেকে মা দিবসের প্রচলন শুরু হয়। অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করেন যে, ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে মায়েদের সম্মানে একটি নির্দিষ্ট রোববার পালিত হতো এমন একটি উৎসব, যা মাদারিং সানডে নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবসের প্রচলন শুরু হয় আনা জারভিসের উদ্যোগে। তার মা আনা মেরি জারভিস ছিলেন একজন সমাজকর্মী ও অনাথদের সেবায় তার অবদান ছিল উলেস্নখযোগ্য। ১৯০৫ ইং সালে আনা মেরি জারভিসের মৃত্যুর পর তার মেয়ে আনা জারভিস মা দিবসকে একটি জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য প্রচারণা চালান। তার প্রচেষ্টার ফলে ১৯১৪ ইং সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক মা। ছোট্ট এই শব্দের অতলে লুকানো থাকে মায়ের গভীর স্নেহ-মমতা, অকৃত্রিম দরদ ও ভালোবাসা। এই মাকে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জানাতে কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন হয় না। মায়ের জন্য প্রতিদিনই সন্তানের ভালোবাসা থাকে। তার পরেও কেন একটি বিশেষ দিনকে মায়ের ভালোবাসার প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে তা জানতে হলে পাশ্চাত্যে অবস্থা বিবেচনায় আনতে হবে। সেখানে সবাই খুব কর্মব্যস্ত থাকে ও একসময় সন্তান মা-বাবা থেকে বাস্তবতার কারণেই দূরে সরে যায়। প্রাচ্যে যেমন একান্নবর্তী পরিবার রয়েছে পাশ্চাত্যে তেমন খুব কমই আছে। তাই সব সন্তান সব সময় মা-বাবার সান্নিধ্যে থাকতে পারে না। এসব কিছু বিবেচনা করেই পৃথিবীর ব্যস্ত মানুষগুলোকে মায়ের কথা মনে করিয়ে দেওয়া এবং বিশ্বের সব মাকে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্যেও এই দিবসের বিশেষত্ব রয়েছে।
এই দিনে বাচ্চারা নিজের মায়ের জন্য উপহার কিনে থাকেন। আবার পার্টি দেন বা মায়ের প্রতি নিজের ভালোবাসা, সম্মান ও প্রশংসা ব্যক্ত করার জন্য বিশেষ কিছু করে থাকেন। এই বিশেষ দিনে মায়েদের সমস্ত গৃহকর্ম থেকে ছুটি দেওয়া হয় ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সেই দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে মায়েদের কাজের চাপ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলেও, অন্তত একদিনের জন্য নিজের মা-কে রানীর মতো রাখা যেতেই পারে।
মায়ের প্রতি সন্তানের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। সেগুলো স্মরণ করে হৃদয়ে ধারণ করে চর্চার জন্যও একটি বিশেষ দিন দরকার ছিল। সন্তানদের উচিৎ মায়ের যথাযথ সেবা করা এবং তার সুখের জন্য সবকিছু করা। এই দিবসে অন্তত একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, যেহেতু আমরা মায়ের বিন্দুমাত্র ঋণ পরিশোধ করতে পারব না, সেহেতু যেন তার মনে কখনো কষ্ট না দিই এবং সর্বদা কল্যাণ কামনা করি।আর আমাদের একথাও মনে রাখতে হবে মায়ের প্রতি সন্মান এবং ভালোবাসা যেন আমরা শুধু দিবসের মাঝে আটকে না থেকে সবসময় মায়ের খোঁজ খবর নিবো এই হউক মা দিবসে সকল সন্তানের অঙ্গীকার |মা মানেই হলো যে কোনো পরিবারের মায়ার আবন্ধন।